Warning: The magic method Predic_Widget::__wakeup() must have public visibility in /home/uljueusx/bdplant.com/wp-content/plugins/advanced-product-search-for-woo/lib/predic-widget/predic-widget.php on line 191
বিভিন্ন রকমের আগাছা সম্পর্কিত তথ্য ও আলোচনা - Bd Plant

আগাছা

ফসলের জমিতে কিংবা টবে, ড্রামে, পট মিডিয়ামে যে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ দেখা যায়, তাইই আগাছা। আগাছা চাষ করা ফসলের পুষ্টি প্রাপ্তিতে ও বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। আগাছা উদ্ভিদ হিসেবে বৃদ্ধি পায় এবং চাষ্কৃত ফসলের জন্ম, বৃদ্ধি, বিকাশ, উৎপাদন, বংশবিস্তার প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করে।

দুর্বা

আউশ ধান, পাট, আখ, ভূট্টা প্রভৃতি ক্ষেতে মাটিতে শায়িত অবস্থায় পাওয়া ঘাসটিই অতি পরিচিত দুর্বা ঘাস। স্থায়ী জলাবদ্ধ স্থানে দুর্বা ঘাস টিকে থাকতে পারে না। এর কান্ড সবুজ রঙের হয়ে থাকে, মাঝে মাঝে লালচেও হতে পারে। এর কান্ড প্রায় ৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা, মসৃণ ও গোলাকার হয়ে থাকে। পুষ্পবিন্যাসযুক্ত কান্ড খাড়া অবস্থায় থাকে। পুষ্পছড়াগুলো বোঁটার উপর থেকে চারিদিকে আঙ্গুলের মতো ছড়ানো থাকে। এটি বীজ, স্টোলন ও রাইজোমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। দুর্বাঘাসের মূলবিন্যাস মাটির অগভীরে বিস্তৃত থাকে। কিছুটা গভীরে চাষ দিয়ে এ ঘাসের রাইজোম মাটির উপরিভাগে এনে সূর্যের তাপে সেগুলোকে শুকিয়ে ধ্বংস করা যায়।

দুর্বা ঘাস

বার্মুডা ঘাস

চেনার উপায়

দুর্বার পাতার লিগিউল সাদা রঙের পাতলা লোমে আবৃত যা কাণ্ডকে আটকে ধরে রাখে। কীলকমঞ্জরির যে অংশে গ্লুম রয়েছে সে প্রান্তে ছোট ছোট কাটার মতো লোমযুক্ত থাকে। পাতা-পল্লব সবই ধূসর সবুজ রঙের। আগাছা নিয়ে পড়ুন দ্বিতীয় পর্বটি।

দুর্বা ঘাসের উপকারিতা 

ক) দুর্বা ঘাস শরীরের রেচনতন্ত্রের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনে। প্রসাবে কষ্ট হলে  দুর্বা ঘাসের রস দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভাল ফল দেয়।

খ) দুর্বা ঘাস অতি পরিচিত প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক। শরীরের কোনো স্থান কেটে গেলে দুর্বা ঘাসের শিকড় পিষে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

 

গ) সন্তান না হলে দুর্বা ও আতপ চাল এক সাথে বেটে বড়া করে ভাতের সাথে সপ্তাহে তিন/চারদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। (ভেরিফাইড তথ্য নয়)

ঘ) আয়ুর্বেদীয় মতে রক্ত পিত্ত হলে এ’রোগে মুখ, নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে।  দুর্বা ঘাসের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেলে এই রোগের উপশম হয়।

ঙ) আমাশয় হলে দূর্বা ঘাসের রস ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের রস ৪ থেকে ৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ বার খেলে ১০ থেকে ১৫ দিন খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।

চ) বমি বমি ভাব বন্ধের জন্য দূর্বা ঘাসের রস ২ থেকে ৩ চামচ ১ চা চামচ চিনি বা গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে ১ ঘণ্টা পর পর খেলে খুব দ্রুতই কেটে যাবে।

সবুজ শিয়াল লেজা

সবুজ শিয়াললেজা খরিফ ঋতুর আগাছা। দানাজাতীয় ফসলে এদের দেখা যায় সাধারণত। তবে আউশ ধানে বেশি ক্ষতি করে। এর ফুল ও ফল আউশ ধানের সাথেই পরিপক্ক হয়।

সবুজ শেয়াললেজা

এ আগাছার গোড়া থেকে একসাথে অনেকগুলো কুশি উৎপন্ন হয়। কান্ড খাড়া, প্রায় ১০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার গোড়ার দিকে কিছুটা চওড়া এবং আগাড় দিকে ক্রমশ সরু ও চোখা। পাতার আবারণ ঢিলা, মসৃণ ও কিনারাগুলোতে ছোট কাটার মতো গঠন রয়েছে। পুষ্পবিন্যাস দেখতে শিয়ালের লেজের মতো। পুষ্পবিন্যাসের গঠন অগ্রভাগে কিছুটা সরু। এ আগাছার চারাগুলো দেখতে ধানের মতোই। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটায়।

ফক্সটেইল

চেনার উপায়

ছোট অবস্থায় চেনা যায় না। বয়েস হলে পুষ্পবিন্যাস দেখেই চেনা যায়। কেননা এর পুষ্পবিন্যাসের গঠন শেয়ালের লেজের মতোন। পরিপক্ক অবস্থায় সবুজ হয় বলেই একে সবুজ শেয়াললেজা বলা হয়।

পেনিকাম ঘাস

এ আগাছা আখ ও ভুট্টা ক্ষেতেই বেশি চোখে পড়ে। তবে ধান ক্ষেতেও জন্মাতে দেখা যায়। এর উচ্চতা প্রায় ২ থেকে ৩ মিটার। এটি গুচ্ছমূলের সাহায্যে অথবা কখনো কখনো ছোট আকারের রাইজোমের সাহায্যে মূল উৎপাদন করে বিস্তৃতি লাভ করে। কান্ড খাড়া, দৃঢ়,  কখনো কখনো মোটা হয়, মসৃণ ও সামান্য লোমশ প্রকৃতির। কান্ডের গোড়া ১ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধবিশিষ্ট। লিগ্যুল ১ থেকে ৩ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা। পত্রফলক রৈখিক, সূচাগ্র এবং প্রায় ১৫ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১ থেকে ৩.৫ সেন্টিমিটার চওড়া হয়ন এরা সবুজ বা হালকা বেগুনী রঙের হয়ে থাকে।

পেনিকাম আগাছা

চেনার উপায়

এ আগাছার পর্বসন্ধি ও লিগ্যুল লোমশ। ছড়ানো ধরণের পুষ্পছড়া এবং উপরের দিকের লেমা কুচকানো থাকে।

নলখাগড়া

নলখাগড়া নাম শুনেনি এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের সিলেটের জলাভূমিতে এ আগাছা খুব বেশি পরিমাণ জন্মাতে দেখা যায়। এটি জলজ ও আধাজলজ, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর কান্ড ২-৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কান্ড বেশ শক্ত, দৃঢ়,  ভিতরে ফাঁপা ও খাড়া ধরণের। পাতার গোড়া চওড়া ও আগার দিকে ক্রমশ সরু, দেখতে বর্শার ফলার মতোন। পাতা বেশ বড় হয় প্রায় ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ থেকে ১৫ মিলিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়।

কাঁটানটে

কাঁটানটে দেশের সর্বত্র পতিত স্থান ও পথের ধারে জন্মে। বর্ষজীবী কাঁটাযুক্ত বীরুৎ। ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে দেখা যায়। কাণ্ড নরম, শাখাযুক্ত। পাতা ডিম্বাকৃতি, বোঁটা লম্বা। প্রত্যেক ডালের আগায় মঞ্জরি থাকে। ফুল ছোট, ধূসর-সাদাটে বর্ণের। ফুল ও ফল সারা বছর হয়। কাণ্ড ও শিকড় বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। বীজ থেকে চারা হয়। ভারত, শ্রীলংকা ও বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলে এ গাছ পাওয়া যায়।

কাঁটানটে আগাছা

বীজ চকচকে কালো। এরা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। এরা ভিজা মাটিতে সারা বছর জন্মাতে পারে; তবে এরা দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। এরা উর্বর জমি ও উচ্চ তাপমাত্রা পছন্দ করে। আমাদের দেশে আউশ ধানে এ আগাছার  প্রাদুর্ভাব হয়ে থাকে। এ আগাছার কারণে শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে। এরা পৃথিবীর নিকৃষ্টতম আগাছাগুলোর অন্যতম।

আরাইল

আরাইল একটি বহুবর্ষজীবী ঘাস জাতীয় আগাছা। সাধারণত জলাবদ্ধ জমিতে জন্মাতে পছন্দ করে। এরা ১.২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের কাণ্ডের গোড়ার দিকের পর্বসন্ধি থেকে শেকড় বের হয়। গাছের রঙ হালকা সবুজ।

আরাইল

এরা বীজ, গেড় এবং স্টোলনের সাহায্যে বংশবিস্তার করে। প্রতিকূল পরিবেশে এ আগাছার বেঁচে থাকার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। বাংলাদেশে এ আগাছা নিচু জমিতে জন্মাতে দেখা যায়। এ আগাছা ধানের শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমিয়ে দিতে পারে।

গৈচা

এ ঘাস দেখতে অনেকটা দুর্বা ঘাসের মতো তবে আকারে কিছুটা বড়। এটি স্যাঁতসেঁতে বা জলাবদ্ধ জমিতে জন্মাতে পারে। সাধারণত বীজ ও কাণ্ডের সাহায্যে বংশবিস্তার করে। এ আগাছা সরাসরি বোনা, ভিজা ও রোপা ধান ক্ষেতে জন্মাতে দেখা যায়।

গৈচা

গৈচা বহুবর্ষজীবী ঘাস জাতীয় আগাছা। এর কাণ্ড মাটিতে শোয়া অবস্থায় বৃদ্ধি পায়। সবুজ অথবা হালকা খয়েরি রঙের কাণ্ড বেশ শক্ত হয়। কাণ্ডের আগায় ৩-৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা দুটি পুস্পমঞ্জুরি হাতের আঙুলের মতেো ছড়ানো থাকে। এ দুটি স্পাইক দেখে সহজেই এদেরকে সনাক্ত করা যায়।এরা ধানের সাথে প্রতিযোগিতা করে শতকরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত ফলন কমিয়ে দিতে পারে। আরও পড়ুন নাইট্রোজেন প্রধান এজোলা উৎপাদন।

উলু

“উলু বনে মুক্তো ছড়ানো”- এই বহুল পরিচিত বাগাধারাটির সাথে আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু কখনো কি কেউ উলু বন দেখেছি? কিংবা কি এই উলু, সেটাই বা কয়জনে জানতাম আমরা? উলু একটি বহুবর্ষজীবী বিরুৎ জাতীয় আগাছা। এর কাণ্ড খাড়া, সরল ও মসৃণ। এটি সাধারণত ১২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতা সবুজ ও সরু। এ আগাছার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর পুষ্পমঞ্জুরি ঘন চকচকে সাদা তুলার মতো আশযুক্ত নলাকার স্পাইক ধরনের যা বেশ দূর থেকে সনাক্ত করা যায়। অনেকটা আমাদের পরিচিত কাশফুলের মতো দেখতে।

উলু

ভিজা ও শুকনো উভয় জমিতে এরা ভাল জন্মে। সাধারণত বীজ ও  রাইজোম দিয়ে বংশবিস্তার করে। আউশ ধানের জমিতে উলু বেশি আক্রান্ত হয়। উলু হালকা বুনট মাটি পছন্দ করে এবং এর রাইজোম ধ্বংস করা খুবই কষ্টকর। এটি পৃথিবীর নিকৃষ্টতম আগাছাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জমিতে এর উপস্থিতি ফসলকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ করে দিতে পারে। তাই উলু বনে কখনোই মুক্তা ছড়ানো যাবে না। উলু দেখলেই তৎক্ষণাৎ তুলে ফেলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *