Warning: The magic method Predic_Widget::__wakeup() must have public visibility in /home/uljueusx/bdplant.com/wp-content/plugins/advanced-product-search-for-woo/lib/predic-widget/predic-widget.php on line 191
ক্যাকটাস চাষ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও চাষ প্রনালী - Bd Plant

ক্যাকটাস চাষ পদ্ধতি

 

ক্যাকটাস আকর্ষণীয় ও সুপরিচিত গাছ। ক্যাকটাস (Cactus) শব্দটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ “kaktos” থেকে এসেছে। এর অর্থ কাঁটাযুক্ত। ধারণা করা হয় আইরিশ এবং স্কটিশ মরুভূমি থেকে এর উৎপত্তি। এজন্য গাছটি অল্প পানিতে বেঁচে থাকতে পারে। অন্যান্য গাছের তুলনায় এই গাছটি ব্যায়বহুল। বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় ১৭৫০ টি ক্যাকটাস এর প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৪৬ টির মত প্রজাতি পাওয়া যায়। Rat tail cactus, Ester cactus, Prickly pear cactus, Orchid cactus, Star cactus ইত্যাদি অন্যতম।

মাটি

ক্যাকটাস চাষের মাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যা অন্যান্য গাছের তুলনায় একেবারেই আলাদা। পারলাইট মাটি বা দো-আশঁ মাটির মিশ্রন এক্ষেত্রে ভালো।

পট প্রস্তুতি

৬০ ভাগ বালি, ২০ ভাগ পারলাইট(perlite) ও ২০ ভাগ কোকো পিট (নারকেলের তুষ দিয়ে তৈরি) ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণটিই হলো ক্যাকটাস চাষের জন্য আদর্শ ভূতল। তবে অনেক সময় পারলাইট বা কোকো পিট না পাওয়া গেলে অন্যভাবেও জমি তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে

১. ১ ভাগ পাতা পচাঁ কম্পোস্ট  সার,

২. কিছু পরিমাণ ভাঙা হাড়ের গুড়া,

৩. ১ ভাগ চিকন দানার বালি,

৪. ১ ভাগ মোটা দানার বালি,

৫. ১ ভাগ দো-আশঁ মাটি।

তবে সর্বোচ্চ ও ভালো ফলাফলের জন্য পারলাইট, কোকো পিট ও বালুর মিশ্রণই আদর্শ।

বীজ বপন

ছোট প্লাস্টিক বা মাটির পট বা প্লাস্টিকের বাক্সে বীজ বপন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পাত্রে প্রথমে কিছু পরিমাণ ছোট ছোট পাথর দিতে হবে। এরপর তৈরিকৃত মিশ্রণ বা মাটি দিয়ে পাত্রটি পূর্ণ করে দিতে হবে। এবার পাত্রে পানি দিয়ে মাটি ভিজাতে হবে। কিন্তু পানি জমানো যাবে না।  বাজারে ক্যাকটাস এর  প্যাকেটজাত বীজ পাওয়া যায়। প্যাকেটজাত বীজ বা চাইলে গাছ থেকে সংগৃহীত বীজও ব্যাবহার করা যেতে পারে। বীজ গুলোকে মাটির উপর আস্তে আস্তে বসিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বেশি গভীর করে বীজ রোপণ করা যাবে না।  উপর দিয়ে সামান্য বালি ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর পাত্রটিকে পলিথিন বা ঢাকনা থাকলে ঢাকনা দিয়ে ভালোভাবে আটকিয়ে দিতে হবে। এতে পাত্রের ভেতর আদ্রতা বজায় থাকতে। এখন পাত্রটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে সূর্যের আলো পায়। এক্ষেত্রে জানালার স্থান বেশ ভালো জায়গা।

বপনের সময়

ক্যাকটাস এর চারা বা বীজ বপনের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে এপ্রিল-মে মাসে বীজ বপন করলে ভাল।

অঙ্করোদগম

বপন করা বীজ এর অঙ্কুরোদগম নির্ভর করে ক্যাকটাসের প্রজাতির উপর। সাধারণত ১৭-২০ দিনের মধ্যে ক্যাকটাস বীজের অঙ্কুরোদগম সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু জাতের বীজ ২-৩ মাস সময় নিতে পারে অঙ্কুরোদগম এর জন্য।

কলম

কলম করার মাধ্যমেও ক্যাকটাস চাষ করা যায়। ক্যাকটাসের অনেক জাতেই কলম সম্ভব। তবে সচরাচর Prickly pear (ফণীমনসা নামে আমরা যাকে চিনি) জাতের কলম বেশি দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে গাছের বর্ধিত একটি সম্পূর্ণ কান্ড গাছ থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। একটি পাত্রে ছোট ছোট পাথর,  এরপর মাটির মিশ্রণ দিয়ে পূর্ণ করে উক্ত মাটিতে আলাদা করা কান্ডটি রোপণ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে ৪ ইঞ্চির বেশি গভীরে লাগানো উচিত নয়। নিয়মত পানি ও পর্যাপ্ত সূর্যালোক পেলে কিছুদিন এর মধ্যেই কান্ডটি শিকর ছেড়ে দিবে।

সার

সার হচ্ছে কেমিক্যাল বা প্রাকৃতিক উপাদান যা মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। সার এর পুষ্টি উপাদান গাছ এর বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অন্যান্য গাছের মতো ক্যাকটাসেরও সার প্রয়োজন তবে তা অন্যান্য গাছের  মত করে দেওয়া যায় না। ক্যাকটাসে তরল সার দিতে হয়।তরল সার তৈরি করার জন্য ১/২ লিটার পানি তে ১/২ চা চামচ  এনপিকে সার (ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ এর সমপরিমাণ মিশ্রণ) মিশাতে হবে। এই মিশ্রণটি স্প্রে করে সমগ্র গাছে ও মাটিতে ১৫ দিন পর পর দিতে হবে। এতে গাছ সতেজ থাকবে এবং বৃদ্ধি ভালো হবে।

আগাছা নিয়ন্ত্রণ

আগাছা প্রত্যেক গাছের জন্যই ক্ষতিকর। এটি মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে থাকে ফলে চারা কম পুষ্টি পায়। এতে চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ক্যাকটাস চাষে আগাছা তেমন দেখা যায় না। যেহেতু ক্যাকটাসে পানি  সপ্তাহে ১ বার এর বেশি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না তাই আগাছাও খুব কম জন্মায় বা জন্মায় না বললেও চলে। তবে আগাছা যদি হয়ে থাকে তবে তা হাত দিয়েই পরিষ্কার করা সহজ এবং উত্তম।

সেচ

ক্যাকটাস চাষের জন্য সঠিক পরিমাণ পানি সময় মত দেওয়া খুবই দরকারি। কম পানি দিলে ক্যাকটাস এর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। আবার বেশি পানি দিলে মূল পচে গাছ মারা যেতে পারে।পানির পরিমাণ ও প্রয়োগ বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হয়। তাছাড়া এটি ক্যাকটাস জাতের ওপরও নির্ভর করে। ক্যাকটাসে শীতকালে পানি দেওয়ার তেমন দরকার হয় না। তবে যদি মূল শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে মাসে ১-২ বার পানি দেওয়া যেতে পারে। বছরের অন্যান্য সময়ে সপ্তাহে ১ বার পানি দিতে হবে। পানির পরিমান :৩ ইঞ্চি সাইজের টবে ২০ মি.লি. পানি, ৫ ইঞ্চি সাইজের টবে ৪০ মি.লি. পানি। বৃষ্টির পানিতে ক্ষার থাকে না বলে এটি ট্যাপের পানির চেয়ে ভালো।সম্ভব হলে এটি সংরক্ষণ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ক্যাকটাসকে সরাসরি বৃষ্টির পানিতে ভেজানো যাবে না। বৃষ্টি হলে ক্যাকটাসকে ঘরে নিয়ে আসতে হবে।

রোগ

ক্যাকটাস গাছের তেমন কোনো রোগ বালাই হয় না। তবে অতিরিক্ত পানি দিলে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। ফলে গাছটি পচে মারা যেতে পারে। এজন্য গাছে পরিমাণের বেশি পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সামান্য পরিমাণে ছত্রাকনাশক গুলে সমস্ত গাছে স্প্রে করা যেতে পারে। এম-৪৫ নামক ছত্রাকনাশকটি এক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে।

ক্যাকটাস চাষ একটি শিশুর পরিচর্যার মত। তাই শখের ক্যাকটাস চাষে উদাসীন হলে চলবে না। গৃহমধ্যস্থ গাছের মধ্যে ক্যাকটাস জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এটি আপনার বারান্দা বা জানালায় যোগ করবে আলাদা সৌন্দর্য। ক্যাকটাস চাষ যেমন শখ মিটায় তেমনি এর দ্বারা আয় ও করা যায়। তাই আসুন আমরা নিয়ম জেনে ক্যাকটাস চাষ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *